বাংলাদেশ বেতার, কৃষি তথ্য সার্ভিস এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে কৃষি বিষয়ক কার্যক্রমের কর্মীদের অংশগ্রহণে তাদের আহরিত সম্প্রচার দক্ষতা ও কারিগরী জ্ঞান অনুষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের কাছে উপস্থাপন করে থাকেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, বান্দরবান, কুমিল্লা, বরিশাল এবং ঠাকুরগাঁও -এই ১২(বার)টি আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন এসব অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও ঢাকা কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন কৃষি বিষয়ক জাতীয় অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। এই কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিদিন ২৯০ মিনিটের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়ে থাকে। এ অঞ্চলে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের সম্প্রচার শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ৭৫ বছর আগে। তৎকালীন অল ইন্ডিয়া রেডিও তথা আকাশবাণীর ঢাকা কেন্দ্র থেকে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানের প্রথম সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৩৯ সালে। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘গ্রামের কথা’। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামীণ শ্রোতাদের কাছে কৃষি, মৎস্য চাষ এবং বনায়ন বিষয়ক নতুন প্রযুক্তির প্রাথমিক তথ্য তুলে ধরা হতো। স্বাধীনতা উত্তর পরবর্তী সময়ে ‘দেশ আমার মাটি আমার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি সন্ধ্যে ৭-০৫ মিনিটে প্রচারিত হয়ে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে জাপান সফরে যান। জাপান সফরকালে তিনি মাঠ পর্যায়ের জাপানীজ কৃষকদের জন্য প্রচারিত রেডিও জাপানের কৃষি বিষয়ক আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের কার্যকারীতা ও সাফল্য সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন। সেই উপলদ্ধি থেকে জাপান সফর শেষে ফিরে এসে তিনি বাংলাদেশ বেতার-এর সব কেন্দ্র থেকে জাতীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আঞ্চলিক অনুষ্ঠান প্রচার করার নির্দেশ দেন। সেই প্রেক্ষিতে ‘সোনালী ফসল’ অনুষ্ঠানটি প্রচারের মাধ্যমে তাঁর নির্দেশের সফল বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে প্রতিটি কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন সকালে ০৫ মিনিটের কৃষি বুলেটিন প্রচার শুরু হয়। ঢাকা কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ‘কৃষি সমাচার’ তারই অংশ। মূলত: শ্রোতা সাধারণের চাহিদা ও কৃষক ভাইদের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় রেখে ১৯৭৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ০১(এক)জন পরিচালকের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ বেতারে কৃষি বিষয়ক কার্যক্রম নামে একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট চালু করা হয়। অনেক প্রত্যাশা আর শ্রোতা সাধারণের চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অনুষ্ঠানের কলেবর বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রতিটি কেন্দ্রে আঞ্চলিক অনুষ্ঠানে মহিলাদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান ‘কিষাণ বধূ’-এর প্রচার শুরু হয়। উল্লেখ্য যে, অধিকতর কার্যকারিতা ও সাফল্য প্রত্যাশায় সকল কেন্দ্রের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠানসমূহ সমন্বয় করে কেন্দ্রীয়ভাবে “পল্লী সম্প্রচার শক্তিশালীকরণ প্রকল্প” নামে একটি প্রকল্প ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১ সাল অবধি চালু ছিল। বর্তমানে ঢাকাসহ সকল আঞ্চলিক কেন্দ্রসমূহে নি¤œবর্ণিত অনুষ্ঠাগুলো নিয়মিত প্রচার করা হয়। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কৃষি বিষয়ক কার্যক্রমের প্রচারণায় শস্য-শ্যামল, সবুজ প্রান্তর, ফোন-ইন প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ অনেক আগেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং এই সাফল্যের পেছনে বেতারের কৃষি বিষয়ক কার্যক্রমের ভূমিকা ছিল অনবদ্য। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও প্রকল্পসমূহের সাথে কৃষি বিষয়ক কার্যক্রমের সামগ্রিক সুবিধাদি ব্যবহার করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব এবং এ ক্ষেত্রে কৃষি বিষয়ক কার্যক্রম, বাংলাদেশ বেতার পরীক্ষিত সৈনিক।